মনিরুল ইসলাম মনির : ভারত সীমান্তবর্তী জেলা শেরপুরের গারোপাহাড় বেষ্ঠিত উপজেলা নালিতাবাড়ী। ১২টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত এ উপজেলার ইউনিয়ন থেকে উপজেলা সংযোগ, ইউনিয়ন থেকে ইউনিয়ন সংযোগ, গ্রামীণ হাট-বাজার সংযোগ, গ্রাম থেকে উপজেলা সড়কের সাথে সংযোগ মিলিয়ে জনগুরুত্বপূর্ণ রাস্তাসমূহের শতকরা ৯৫ ভাগই পাকা হয়েছে।

অন্যদিকে গ্রামের পাড়া, কমজনগোষ্ঠীর বসবাস, যাতায়াতের জন্য অনেকটা অপ্রয়োজনীয়, পুরনো পরিত্যক্ত সড়ক আর নদী ও খাল সংলগ্ন ভাঙন ঝুঁকিপূর্ণ সড়কগুলোর মধ্যে পাকা হয়েছে প্রায় ২৫ ভাগ। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও উন্নত করতে ভবিষ্যত পরিকল্পনায় এনে এসব সড়ককে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) এর আওতায় আনা হয়েছে। ইতিমধ্যেই এসব সড়কের উল্লেখযোগ্য অংশ পাকা করতে এবং প্রয়োজনীয় ৫টি ব্রিজ নির্মাণ করতে ৩০৬ কোটি টাকার প্রস্তাবনা পাঠিয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ।

সূত্রমতে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) এর আওতায় উপজেলা সড়ক থেকে ইউনিয়ন সংযোগ সড়ক রয়েছে ১৬টি। যার দৈর্ঘ্য ১২৭ কিলোমিটার। এরমধ্যে পাকা করা হয়েছে ১২৩ কিলোমিটার। একইভাবে ইউনিয়ন থেকে ইউনিয়ন, ইউনিয়ন থেকে গ্রামীণ হাট-বাজার এবং ইউনিয়ন থেকে উপজেলা সড়কের সাথে সংযোগ সড়ক রয়েছে মোট ১০টি। যার দৈর্ঘ্য ৫৩ কিলোমিটার। এরমধ্যে পাকা করা হয়েছে ৪৮ কিলোমিটার। সবমিলিয়ে উপজেলা পর্যায়ের সড়ক থেকে ইউনিয়ন, উল্লেখযোগ্য গ্রাম, হাট-বাজার মিলিয়ে উল্লেখযোগ ও গুরুত্বপূর্ণ সড়ক রয়েছে ১৮০ কিলোমিটার। এরমধ্যে পাকা করা হয়েছে ১৭১ কিলোমিটার, কাঁচা রয়েছে ৯ কিলোমিটার। যার শতকরা হার ৯৫ ভাগ।

অন্যদিকে গ্রামীণ সড়ক সংযোগ দুই ক্যাটাগরিতে বিভক্ত করা হয়েছে। প্রথম ‘এ’ ক্যাটাগরি ইউনিয়ন সড়ক থেকে গ্রামের প্রধান সংযোগ সড়ক। এই ক্যাটাগরির ৬০টি সড়কের মধ্যে মোট দৈর্ঘ্য ১৮৭ কিলোমিটার। এরমধ্যে পাকার আওতায় এসেছে ৭৫ কিলোমিটার। গ্রামীণ সংযোগ সড়কের ‘বি’ ক্যাটাগরির সড়ক হলো ছোট ছোট এবং স্বপ্ল দৈর্ঘ্যরে একেবারে প্রান্তিক পর্যায়ের সড়ক। যেগুলো অনেকটা পরিত্যক্ত, কম ব্যবহৃত বা দু-চারটি পরিবারের জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কোন কোন স্থানে আবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকা- না থাকায় নদী ও খালের তীর সংলগ্ন রাস্তা হওয়ায় রাস্তা ধ্বসে যাওয়ার শঙ্কায় পাকার আওতায় আনেনি এলজিইডি।

সার্ভে অনুযায়ী এলজিইডি’র তালিকাভুক্ত এসব ১৪৭টি সড়ক রয়েছে। যার দৈর্ঘ্য ৫২২ কিলোমিটার। এরমধ্যে পাকা করা হয়েছে ১২৭ কিলোমিটার, কাঁচা রয়েছে ৩৯৫ কিলোমিটার। যার শতকরা হার ২৪.৮১ ভাগ। একে আবার দুই ক্যাটাগরিতে আনলে প্রথম ‘এ’ ক্যাটাগরির মোট সড়ক ১৮৭ কিলোমিটার। এরমধ্যে পাকা করা হয়েছে ৭৫ কিলোমিটার আর কাঁচা রয়েছে ১১২ কিলোমিটার। যার শতকরা হার ৪০.১১ কিলোমিটার। ‘বি’ ক্যাটারগারির মোট সড়ক রয়েছে ৩৩৫ কিলোমিটার। এরমধ্যে পাকা করা হয়েছে ৫২ কিলোমিটার আর কাঁচা রয়েছে ২৮৩ কিলোমিটার। যার শতকরা হার ১৫.৫৩ কিলোমিটার।

এলজিইডি সূত্র জানায়, বর্তমানে পাকা করণের কাজ বাস্তবায়নাধীন রয়েছে আরও প্রায় ২৫ কিলোমিটার। এছাড়াও ৫টি ব্রিজ ও ১৪৭ কিলোমিটার কাচা সড়ক পাকা করতে ৩০৬ কোটি টাকার প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।

বরুয়াজানি গ্রামের বাসিন্দা ও হৃদয় ব্রিক্স এর সত্ত্বাধিকারী শফিউদ্দিন জানান, ইট, বালু ও মাটি পরিবহনসহ ব্যবসা সংক্রান্ত প্রয়োজনে আমার বিভিন্ন ধরণের যানবাহন চলাচল করে। সে কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থার কথা বলতে গেলে আশপাশের অন্যান্য উপজেলার তুলনায় নালিতাবাড়ীর যোগাযোগ ব্যবস্থা বেশ উন্নত। বিশেষ করে, প্রতিটি এলাকার উল্লেখযোগ্য সবগুলো সড়কই এখন পাকা।

সীমান্তবর্তী সমশ্চুড়া গ্রামের শিক্ষার্থী মাহদ্বিন নাহার জানান, আমাদের সীমান্ত সড়ক থেকে একেবারে কালিস্থান হয়ে পাহাড়ি এলাকা কোচ পাড়ার যে রাস্তাটি তাও এখন পাকা। আগে এসব রাস্তায় চলতে গিয়ে অনেক কষ্ট হতো। এখন তো বাড়ি থেকে বের হলে যে কোন দিকে সহজেই যাওয়া যায়। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় সবসময় যানবাহনও মিলে। এতে পড়াশোনার জন্য শহরে যাতায়াত আমাদের জন্য সহজ হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্রের দেওয়া তথ্যমতে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের আওতাধীন গুরুত্বপূর্ণ থেকে একেবারে পরিত্যক্ত রাস্তা পর্যন্ত রয়েছে। কিন্তু এর বাইরেও প্রধান প্রধান উল্লেখযোগ্য সড়কগুলো সড়ক ও জনপথ বিভাগের। এসব সড়কের অধিকাংশই এখন উন্নত। ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের আওতায় ইটের সলিং ও হেরিংবন্ড বন করে পাকার আওতায় রয়েছে আরও কিছু সড়ক। ফলে সবমিলিয়ে গত ৯০ দশক থেকে বর্তমান পর্যন্ত নালিতাবাড়ী উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। আর এসবই হয়েছে পাঁচ বারের স্থানীয় সংসদ সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরীর আন্তরিকতায়।