এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : অ্যালিনা কাবায়েভা। পেশায় রাজনীতিবিদ, সংবাদমাধ্যমের প্রধান এবং অলিম্পিকে অংশ নেওয়া সাবেক জিমন্যাস্ট। তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে যাচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। গুজব রয়েছে তিনি হচ্ছে পুতিনের বান্ধবী এবং তার সন্তানের জননী।

গত মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য পুতিনের কন্যা ৩৬ বছর বয়সী মারিয়া ভোরনসোভা এবং ৩৫ বছর বয়সী কাতেরিনা টিখোনোভার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এই দুজন পুতিনের প্রাক্তন স্ত্রী লিউডমিলার সন্তান।

সুইজারল্যান্ডে কাবায়েভাকে তার বাসভবন থেকে বহিষ্কারের দাবিতে গত মার্চে অনলাইন পিটিশন স্বাক্ষরের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। ইইউ যাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে সেই রুশদের সর্বশেষ তালিকায় রয়েছেন কাবায়েভা। ক্রেমলিন থেকে প্রপাগান্ডা ছড়ানো এবং প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে ‘ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত’ থাকার কারণে তাকে টার্গেট করা হতে পারে। তবে ইইউর খসড়া নথিতে তাকে ৬৯ বছরের পুতিনের ‘বান্ধবী’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়নি।

২০০৮ সালে মস্কোভস্কি করেসপন্ডেন্ট সংবাদপত্রের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছিল, পুতিন তার তৎকালীন স্ত্রী লিউডমিলার সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে কাবায়েভাকে বিয়ের পরিকল্পনা করছেন। ওই সময় দুজনই এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। এর কিছুদিন পরেই পত্রিকাটি বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। সেই গুজবের পাঁচ বছর পর পুতিন ও লিউডমিলা বিবাহ বিচ্ছেদের ঘোষণা দেন।

প্রেসিডেন্ট পুতিন যখন তাদের সম্পর্কের কথা অস্বীকার করছিলেন, তখন কাবায়েভা তার সফল ক্রীড়া জীবন থেকে সবে রুশ রাজনীতিতে পা রাখছেন। জিমন্যাস্টিক জগতে নিজেকে সেরা হিসেবে উপস্থাপন করেছেন কাবায়েভা। দলে আধিপত্য বিস্তারকারী শীর্ষস্থানীয় পারফর্মার ছিলেন তিনি। ২০০০ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত প্রতিটি অলিম্পিকেই স্বর্ণপদক জিতেছে রাশিয়া।

১৯৮৩ সালে জন্ম নেওয়া অ্যালিনা কাবায়েভা চার বছর বয়স থেকেই রিদমিক জিমন্যাস্টিক শুরু করেন। কাবায়েভার প্রশিক্ষক ইরিনা ভিনার তার সম্পর্কে বলেন, ‘আমি যখন তাকে প্রথম দেখি তখন নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। মেয়েটির মধ্যে রিদমিক জিমন্যাস্টিকসের গুরুত্বপূর্ণ দুটি গুণের বিরল সমন্বয় দেখেছিলাম। প্রথমটি নমনীয়তা এবং দ্বিতীয়টি দ্রুততা।’

১৯৯৬ সালে অন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে অভিষেক হয় কাবায়েভার।  ১৯৯৮ সালে ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপে জয়ী হয় তিনি। অবসর পর্যন্ত তিনি অলিম্পিক পুরস্কার ছাড়াও ১৮টি ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ পদক এবং ২৫টি ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপ পদক জিতেছেন। তবে অন্যান্য রুশ ক্রীড়াবিদদের মতো তিনিও ডোপিংয়ের কলঙ্ক থেকে রক্ষা পাননি। ২০০১ সালে মাদক পরীক্ষায় পজিটিভ আসার পর একটি প্রতিযোগিতার পদক হারান তিনি।

২০০৭-১৪ সাল পর্যন্ত ক্ষমতাসীন ইউনাইটেড রাশিয়া পার্টির হয়ে রাশিয়ার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের সদস্য ছিলেন কাবায়েভা। ২০১৪ সালে ন্যাশনাল মিডিয়া গ্রুপের চেয়ার হন তিনি। রাশিয়ার প্রায় সব রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যমের বড় অংশীদার এই গ্রুপ। এই সংবাদমাধ্যমগুলো ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে ক্রমাগত রাশিয়ার জয়গান গাইছে এবং ইউক্রেনীয়দের ওপর নিজেদের শহর উড়িয়ে দেওয়ার দোষ চাপাচ্ছে।

কাবায়েভার ধন-সম্পদও অনেক। কিছু ফাঁস হওয়া নথিতে দেখা গেছে, তিনি বছরে এক কোটি ২০ লাখ ডলার আয় করেন। কবে পুতিনের সঙ্গে তার প্রথম দেখা হয়েছিল তা জানা যায়নি। ২০০১ সালেও তাদের যুগল ছবি আছে। ওই সময় কাবায়েভাকে অর্ডার অব ফ্রেন্ডশিপ সম্মাননা তুলে দিচ্ছিলেন পুতিন। তাদের দুই পুত্র সন্তান আছে এমন গুজবও শোনা যায়।

সুইজারল্যান্ডের একটি সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ২০১৫ সালে লেক লুগানোতে কাবায়েভার এক পুত্র সন্তান হয় এবং ২০১৯ সালে একই স্থানে আরেক পুত্র সন্তান হয়। তবে সানডে টাইমস ও ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে মস্কোতে কাবায়েভার যমজ পুত্র সন্তান জন্ম নেয়। অবশ্য এসব খবর অস্বীকার করে এসেছে ক্রেমলিন। ২০১৫ সালে পুতিনের মুখপাত্র জানিয়েছিলেন, এসব খবরের কোনো সত্যতা নেই।

সম্প্রতি মস্কোতে জুনিয়র জিমন্যাস্টিকস ফেস্টিভালে ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার অবস্থানের প্রশংসা করেছিলেন কাবায়েভা। যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই তাকে নিষিদ্ধের দাবি ওঠে পশ্চিমা দেশগুলোতে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, খুব ব্যক্তিগত হয়ে যায় বিধায় কাবায়েভার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে অনিচ্ছুক যুক্তরাষ্ট্র। এতে পরিস্থিতি আরও খারাপের আশঙ্কা থাকে বলে মনে করে ওয়াশিংটন।