গণঅভ্যুত্থানের পর নতুন সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের একটা চ্যালেঞ্জ রয়েছে ভারত সরকারের সামনে। তাই হাসিনাকে নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকার একরকম বেকায়দায় পড়েছে।
গণঅভ্যুত্থানের পর নতুন সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের একটা চ্যালেঞ্জ রয়েছে ভারত সরকারের সামনে। তাই হাসিনাকে নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকার একরকম বেকায়দায় পড়েছে।
শেখ হাসিনার কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল করা হচ্ছে কি না অথবা তাকে দেশে ফেরত পাঠানোর আনুষ্ঠানিক কোনো দাবি আছে কি না এমন প্রশ্ন শুক্রবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল এড়িয়ে যান। রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ‘আপনি যে প্রশ্ন করেছেন তা হাইপোথিসিসের মধ্যে রয়েছে। এমন হাপোথেটিক্যাল প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার অভ্যাস আমাদের নেই। ’
তিনি যেসব অপরাধ করেছেন তার সবটার বিচার হতে হবে বাংলাদেশে। আমি জানি না কেন ভারতের কাছে এ বিষয়টি তুলে ধরেনি অন্তর্বর্তী সরকার।’
দিল্লির ওই সূত্র জানায়, গত তিন সপ্তাহে বা তারও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এবং সারা বিশ্বে, বিশেষ করে ভারতের প্রতি সাধারণ মনোভাব উভয় ক্ষেত্রেই যথেষ্ট পরিবর্তন হয়েছে। প্রশাসন ও বিচার বিভাগকে আওয়ামী লীগের দুর্নীতিমুক্ত করার নামে বিচারক, সিনিয়র সরকারি কর্মকর্তা ও শিক্ষকদের জোরপূর্বক পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। এতে মূলত ছাত্র আন্দোলন ও ইসলামপন্থী দলগুলোর তরুণ নেতৃত্ব ভূমিকা রেখেছে। প্রফেসর ড. ইউনূস যখন একটি সুষ্ঠু ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তখন সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা অব্যাহত রয়েছে। অনেক সাংবাদিক, নাগরিক সমাজের সদস্য এবং আওয়ামী লীগের নেতাদের মামলার জালে জড়ানো হচ্ছে। এটা সাধারণ মানুষের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করেছে। হত্যা মামলায় অভিযুক্ত করার পর একজন সিনিয়র সাংবাদিক পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
তিনি বলেন, ‘মিডিয়ার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তারা (তরুণ নেতারা ও ইসলামপন্থীরা)। বাংলাদেশে আর কোনো মুক্ত মিডিয়া বা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বিদ্যমান নেই। কিছু তরুণ নেতা এখন জাতীয় বীর। বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভারতবিরোধিতা ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাতে বাংলাদেশে ভারতবিরোধী সেন্টিমেন্ট তুঙ্গে। এতে প্রশ্ন উঠেছে যে এই দুই দেশ নিকট ভবিষ্যতে স্বাভাবিক সম্পর্ক বজায় রাখবে কি না।’
তিনি আরো বলেন, ‘বিএনপির একজন সিনিয়র নেতা একমত যে তরুণ নেতাদের প্রতি এক মাস আগেও জনগণ সমর্থন দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন তাদের বাড়াবাড়ি জনগণ ভালোভাবে নেয়নি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই নেতা বলেন, ‘এসব নেতা অভিজ্ঞ বা বিশেষজ্ঞ নয়। এটাই অনিশ্চিয়তা সৃষ্টি করছে। এ জন্যই আমরা দ্রুত একটি নির্বাচন দাবি করছি। যাতে নির্বাচিত সরকার দেশ চালাতে পারে এবং তাদের জবাবদিহিতা থাকে।’
ভারতের এস্টাবলিশমেন্টের একটি সূত্র বলেছেন, ‘বাংলাদেশের নতুন শাসকগোষ্ঠীর সঙ্গে কাজ করতে উদগ্রীব নয়াদিল্লি। কিন্তু পুরো প্রক্রিয়া অনুকূলে নেই। এটা অনিশ্চিয়তার ফলে সৃষ্টি হয়েছে। এর একটি উদাহরণ হলো, পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তের আইনশৃঙ্খলার কথা মাথায় রেখে পূর্ণাঙ্গ ভিসা সার্ভিস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত। ’
এই প্রতিনিধিকে বিএনপির জয়েন্ট সেক্রেটারি জেনারেল এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘ভারতের জনগণের সঙ্গে আমাদের জনগণের যোগাযোগ চাই আমরা। আমরা বিশ্বাস করি, এই সম্পর্ক গড়ে উঠতে হবে সমতা ও পারস্পরিক বিশ্বাসের নীতির ওপর। আমার প্রশ্ন হলো, (শেখ হাসিনাকে) ভারত আশ্রয় দিয়ে কি বাংলাদেশের জনগণের সংবেদনশীলতায় আঘাত করছে না?’
ভারতীয় অনেক সূত্র বলেছে, তারা বিষয়টি বোঝেন। তবে তাকে (হাসিনা) এই মুহূর্তে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে মত নেই। কিছু বিশেষজ্ঞ বিশ্বাস করেন, ভারতের জন্য সবচেয়ে ভালো সমাধান হলো শেখ হাসিনার স্বেচ্ছায় অন্য কোনো দেশে চলে যাওয়া। কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে তা সম্ভব বলে মনে হচ্ছে না।
নয়াদিল্লির আরেকটি সূত্র টেলিগ্রাফকে বলেছে, শেখ হাসিনার ব্রিটেনে যাওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তার সম্ভাব্য ব্রিটেন যাওয়ার বিষয়টি পররাষ্ট্রসচিবের কাছে উত্থাপন করেছিল বাংলাদেশ হাইকমিশন। কিন্তু ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও অনানুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে কিছু খোঁজখবর নিয়েছে। তবে হাসিনার ব্যাপারে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি ভারত।