বান্দরবান : বৈষম্য, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজিমুক্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম গঠনের দাবি এবং দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে বান্দরবানে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদের (পিসিসিপি) উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

“পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল জাতি-ধর্মের সংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে” এই স্লোগানকে সামনে রেখে শনিবার (৩১ আগস্ট) বিকেলে শহরে পৌরসভা কার্যালয় সামনে থেকে হাতে বিভিন্ন প্লেকার্ড ও ব্যানার নিয়ে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে প্রেসক্লাব চত্বরে এসে মিলিত হয়। সেখান এক মহাসমাবেশ আয়োজন করেন। এসময় বান্দরবানে বিভিন্ন উপজেলা থেকে হাজারো নেতাকর্মী অংশ নেন।

সমাবেশে পিসিসিপির বান্দরবান জেলা সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা আবুল কালাম আজাদ সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি বক্তব্য দেন- পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী মজিবর রহমান। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- পার্বত্য নাগরিক পরিষদে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি মহাসচিব আলমগীর কবির, কেন্দ্রীয় কার্য নির্বাহী কমিটি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন (অব) তারু মিয়া, খাগড়াছড়ি জেলা সভাপতি মোহাম্মদ লোকমান হোসেন, রাঙামাটি জেলার সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ সোলায়মান, বান্দরবান জেলার সভাপতি আসিফ ইকবাল, বান্দরবান জেলা সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন, মহিলা সভানেত্রী রহিমা বেগম, বান্দরবান পৌর সভাপতি মোহাম্মদ এরশাদ চৌধুরী, সাবেক ছাত্রনেতা ও কলাম সৈনিক এইচ এম সম্রাট, আলীকদম উপজেলা সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নুর আলম, লামা উপজেলার সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, রুমা উপজেলার সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ জসিম উদ্দিনসহ অনেকে।

এসময় বক্তরা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে নামে-বেনামে বিভিন্ন বিছিন্নবাদী সশস্ত্র সংগঠন সৃষ্টি হয়েছে৷ তারা প্রতিনিয়ত সংঘাত, হত্যা, অপহরণ, চাঁদাবাজি, নির্যাতন, নিপীড়ন করে যাচ্ছে এই পার্বত্য জনপদ কে। পাহাড়ের শান্তি রক্ষার্থে এইসব কার্যকলাপ অচিরে বন্ধ করতে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। তাছাড়া পাহাড়ে আদিবাসী স্বীকৃতির নামে আলাদা রাষ্ট্র “জুম্মলেন্ড” প্রতিষ্ঠার স্বপ্নে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত উগ্র- ক্ষুদ্র নৃ -গোষ্ঠীর দেশীয় কিছু কুচক্রী মহল। এসব কুচক্রী মহলের ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষ সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান বক্তারা।

সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় কাজী মজিবর রহমান বলেন, এই পার্বত্য জনপদ চট্টগ্রামে প্রায় ৫৪ শতাংশ বাঙালি জনসংখ্যা। সেই হিসেবে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদে নূন্যতম ৫০ শতাংশ হারে সদস্য বাঙালি জনগোষ্ঠী হতে নিয়োগ করতে হবে। সকল সরকারি চাকরি, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, উপবৃত্তিসহ সকল ক্ষেত্রে পাহাড়ের বাঙালিদের সাথে বৈষম্য দূর করে জনসংখ্যা অনুপাতে বণ্টন করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসকারী বাঙ্গালীদের কে গত ১৬টি বছর পার্বত্য অঞ্চলে শান্তিপ্রিয় বাংলাদেশকে একটা আয়নাঘরে আবদ্ধ রাখা হয়েছিল। এই অঞ্চলের মানুষ নির্যাতিত, নিপীড়িত হয়রানি শিকার হয়েছে ও তাদের কে নায্য কথা বলতে দেওয়া হয়নি। সত্য কথা বলতে গেলে জেল, জুলুমসহ নানান ভাবে সন্ত্রাসী লেলিয়ে দিয়ে অপমান অপদস্ত করা হতো। ১৯৭১ সালে ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে দেশ স্বাধীন করেছি। এরপর আমরা ৫৪ বছর অতিক্রান্তও করছি। এই ৫৪টি বছর এই পার্বত্য জনপদে ৫৪শতাংশ বাঙালি স্বাধীনতা সূর্য দেখতে পাইনি। এতদিন এই পার্বত্য চট্টগ্রামের গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা ছিল না। আজকে মানুষ জেগে উঠেছে, সেটা একটা কারণ চলতি বছরে ১৮ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-ছাত্রীরা নতুন করে আবার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন করে প্রায় সাড়ে ৬শ মানুষ শহীদ হয়ে আরেকটা নতুন সূর্য জন্ম দিয়েছে বাংলাদেশকে। সেই লক্ষ্যে আমরা পরিষ্কার বলে দিতে চাই, আজকে আদিবাসী নিয়ে পাহাড়ে আরেকটা নতুন ষড়যন্ত্র চলছে বলে দাবি করেন এই নেতা।