কলাপাড়া (পটুয়াখালী) : কলাপাড়ায় করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে স্থানীয় প্রশাসন ঘোষিত লকডাউনে বিপাকে পড়েছেন দিন আনে দিন খাওয়া মানুষেরা। সরকারের দূর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রনালয়ের দেয়া ৪৩ মেট্রিকটন চাল ও নগদ ২ লাখ টাকার খাদ্য সহায়তা অন্তত ৫০ হাজার দরিদ্র মানুষের জন্য অপ্রতুল।
যদিও সরকারের এ অপ্রতুল খাদ্য সহায়তা দিয়েই সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত না করে আগামী নির্বাচনকে মাথায় রেখে প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধিদের চলছে ফটোসেশন। আর পেটের ক্ষুধায় লক ডাউন ভেঙ্গে শ্রম বিক্রী করে উপার্জনের জন্য ঘরের বাইরে আসছে দিনমজুর শ্রেণীর মানুষ। এতে ভেঙ্গে পড়ছে সামাজিক দূরত্ব রক্ষায় সরকারের নেয়া উদ্যোগ।
এছাড়া বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা ক্ষুদ্র দরিদ্রদের মাঝে ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করে লভ্যাংশ নিলেও এমন দুর্দিনে পাশে নেই তারা। নির্বাচনের সময় দরিদ্রদের পাশে থাকার অঙ্গীকার করা রাজনৈতিক নেতারাও এখন পাশে নেই। সামাজিক দু’চারটি সংগঠন ও ব্যক্তিউদ্যোগে সামান্য কিছু খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়েছে দরিদ্রদের। তবু প্রশাসনের সাথে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সমন্বয় ছিল না। এমনকি একটি সাবান, টিস্যু বিতরণ করেছে ১০/১২ জনে মিলে। সুযোগ পেলে কিশোরী-নারীর হাতও ধরেছে এদের দু’একজন।
অবশ্য দিন আনে দিন খাওয়া প্রায় ২০ হাজার মানুষের খাদ্য সহায়তার জন্য দূর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রনালয়ে চাহিদা প্রেরণ করা হয়েছে। যা বরাদ্দ পেলেই বিতরণ করার কথা বলছে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র।
সূত্র মতে, আড়াই লাখ জনসংখ্যা অধ্যুষিত এ উপজেলায় অন্তত ৫০ হাজার মানুষ রয়েছে হতদরিদ্র। যারা দরিদ্র সীমার নীচে বসবাস করে। সামাজিক দূরত্ব বজায় ও চলমান লকডাউনে ঘরে থাকায় কর্মশুন্য হয়ে পড়েছে এ বৃহৎ গোষ্ঠীর মানুষ। যাদের অধিকাংশের ঘরেই কোন খাবার নেই। এরমধ্যেও সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর আওতায় দেয়া ভিজিডি, ভিজিএফ, টিসিবি, ওএমএস, ফেয়ার প্রাইস চাল বিতরণে অস্বচ্ছতা ও দুর্নীতি পরিস্থিতিকে আরও অবনতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এতে সরকার ঘোষিত সামাজিক দূরত্ব রক্ষা ও ঘরে থাকা হয়ে উঠছে না নি¤œ আয়ের মানুষের। পেটের ক্ষুধা উপার্জনের জন্য তাদের বের করছে ঘরের বাইরে। ভিক্ষুক, ভবঘুরে, দিনমজুর, রিক্সা চালক, ভ্যান চালক, পরিবহন শ্রমিক, রেস্টুরেন্ট শ্রমিক, ফেরীওয়ালা ও চায়ের দোকানদার পরিচালিত পরিবারগুলো খাদ্য সংকটে পড়েছে। তাই গোপনে কাজের জন্য বেরোচ্ছে এরা। শ্রম বিক্রী করে উপার্জিত টাকায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দু’বেলা দু’মুঠো পেট পুড়ে ক্ষেতে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কলাপাড়ার শহর, বন্দর, গ্রামীণ জনপদে চলছে ইমরাত শ্রমিকদের কাজ। শহরে, হাট-বাজারে চাকা ঘুরছে অটো, রিক্সা-ভ্যানের। মাটি কাটা, বালু কাটার কাজও থেমে নেই। চায়ের দোকানগুলোও চলছে গোপনে-প্রকাশ্যে। অপ্রতুল খাদ্য সহায়তা বিতরণে দেখা গেছে দরিদ্রদের ভিড়। টিসিবি, ওএমএস, ভিজিডি, ভিজিএফ ও ফেয়ার প্রাইস’র চাল বিতরণেও দেখা গেছে গায়ে ঠাসাঠাসি করে দাড়িয়ে থাকা মানুষের অপেক্ষা। এমনকি অসচেতন মানুষের মত সচেতন মানুষ, রাজনীতিক ও জনপ্রতিনিধিরাও মানছে না ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রক্ষার নির্দেশনা। এতে ভেঙ্গে পড়েছে সামাজিক দূরত্ব রাখার উদ্যোগ।
বুধবার ধূলাসার ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল মাস্টার অর্ধশত দিনমজুরদের সমাগম করে তার ব্যক্তিগত পুকুর কাটার কাজ করতে শুরু করে। এতে সামাজিক দূরত্ব রক্ষার নির্দেশনা ভেঙ্গে পড়ায় স্থানীয় বয়স্ক নাগরিক আজাহার খলিফা কাজ বন্ধ করতে নিষেধ করার পরও জনসমাগম চলতে থাকায় ইউএনও কে ফোন করে জানান তিনি। এরপরও চেয়ারম্যান অর্ধশত শ্রমিককে নিয়ে মাটি কাটার কাজ বন্ধ করেনি। এছাড়া পৌর শহরের রহমতপুর এলাকাসহ বেশ ক’টি আবাসিক এলাকায় চলছে ইমারত নির্মাণের কাজ। অসচেতন বাড়িওয়ালা ও ক্ষুধার্ত শ্রমিক কেউ বন্ধ করছে না কাজ।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা তপন কুমার ঘোষ বলেন, করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় দূর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রনালয় থেকে নিম্ন আয়ের মাুনষের জন্য ইতোপূর্বে ৪৩ মেট্রিকটন চাল ও নগদ দুই লাখ টাকা পাওয়া গেছে। যা দিয়ে দুই হাজার নিম্ন আয়ের পরিবারকে খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, দু’টি পৌরসভা ও ১২টি ইউনিয়নের ১৯ হাজার ৫২ জন দিন এনে দিন খাওয়া মানুষের তালিকা তৈরি করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে বরাদ্দের জন্য। বুধবার জেলা সদর থেকে ১২টি ইউনিয়নের কর্মবিমূখ হয়ে পড়া মানুষের জন্য ৩৬ মেট্রিকটন চাল ও নগদ ১ লাখ ৬২ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যা দিয়ে আরও কিছু পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেয়া যাবে।
ইউএনও আবু হাসনাত মো: শহিদুল হক বলেন, সামাজিক দূরত্ব বজায় এবং অতীব প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়ার জন্য আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। সেনা সদস্য, পুলিশ, আনসার ব্যাটালিয়ান, একযোগে কাজ করছে। শহর, বন্দর ও গ্রামের হাট-বাজারগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। জনসমাগম রোধে আমরা কঠোর অবস্থানে রয়েছি। করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে আমরা জিরো টলারেন্স নীতিতে অবস্থান নিয়েছি।
– রাসেল কবির মুরাদ