
বান্দরবান : বান্দরবানে মারমা সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে (শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা)। প্রতি বছরের মতো এবারও তিন দিনব্যাপী নানা ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক আয়োজনের মধ্য দিয়ে উদযাপন করা হবে এ উৎসব।
তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় সামাজিক উৎসব হিসেবে পরিচিত ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে ঘিরে ইতোমধ্যেই বান্দরবানের বিহারগুলোতে চলছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, ফানুস বানানো ও রথ তৈরির প্রস্তুতি।
বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা জানান, প্রাচীনকাল থেকে বর্ষাবাস (উপোস) শেষ করে আশ্বিনী পূর্ণিমায় ধর্মীয় ভাবগম্ভীর্যের মধ্যদিয়ে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায় এই উৎসব পালন করে আসছে পাহাড়ের মারমারা।
কথিত আছে, গৌতম বুদ্ধ এই দিনে তাঁর মাথার চুল আকাশে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। সেই স্মরণে ভক্তরা শত শত রঙিন ফানুস আকাশে উড়িয়ে বুদ্ধকে উৎসর্গ করেন।
উৎসব উদযাপন পরিষদ সূত্রে জানা যায়, এ উৎসবের প্রধান আকর্ষণ হলো মঙ্গল শোভাযাত্রা। এ উপলক্ষে রাজহংসী আকৃতির বিশাল রথ তৈরি করে তার ওপর বুদ্ধ মূর্তি বসানো হবে। সেটি শহর প্রদক্ষিণ শেষে সাঙ্গু নদীতে বিসর্জন দেওয়া হবে। অনুষ্ঠানের মাত্রাকে বাড়িয়ে দিতে তৈরি করা হয়েছে ভয়ঙ্কর আকৃতির পুতুল। ওই সময় রথযাত্রার পেছনে বৌদ্ধ ভক্তরা প্রদীপ হাতে দেশনা গান পরিবেশন করবেন।
৬ অক্টোবর রাতে শহরের বিভিন্ন পাড়ায় আয়োজন করা হবে পিঠা তৈরির উৎসব। তরুণ-তরুণীরা দল বেঁধে পিঠা তৈরি করবে এবং ভোরে সেগুলো ভগবান বুদ্ধকে দান করবে। পাশাপাশি প্রতিবেশীদের মধ্যেও পিঠা বিতরণ করা হবে।
এদিকে বান্দরবানের বিভিন্ন বৌদ্ধ বিহারে চলছে ফানুস তৈরির কাজ। পাশাপাশি মঙ্গল রথযাত্রার প্রস্তুতিও প্রায় শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছেন রথশিল্পীরা।
রথ কারিগর ক্যওয়ান মারমা জানান, কয়েকজন বন্ধু মিলে রাজহংসীর আদলে একটি রথ ও পাঁচটি পুতুল তৈরি করেছেন তারা। কাজগুলো প্রায় শেষের দিকে। প্রবারণার প্রথমদিন রথটি বিহারে নেওয়া হবে। পরদিন শোভাযাত্রার মাধ্যমে শহর প্রদক্ষিণ শেষে তা সাঙ্গু নদীতে বিসর্জন দেওয়া হবে।
অন্যদিকে ফানুস তৈরির কাজে ব্যস্ত চহ্লামং, এসিংমং ও অংচিংমং। তারা জানান, নানান রঙ-বেরঙের ফানুস প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রবারণা পূর্ণিমার রাতের আকাশে এসব ফানুস উড়ানো হবে চূলামনি জাদি, অর্থাৎ ভগবান বুদ্ধের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ হিসেবে।
বান্দরবান বীর বাহাদুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক ডচিংপ্রু আশা প্রকাশ করে বলেন, বিশ্বজুড়ে সংঘাত আর সাম্প্রতিক পাহাড়ের হানাহানি যেন এই প্রবারণা পূর্ণিমায় নদীতে রথ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হয়। নতুন করে শান্তি ফিরে আসুক সমাজে।
উৎসব উদযাপন পরিষদের সভাপতি চনুমং জানান, এবারের আয়োজনের মধ্যে রয়েছে মঙ্গল রথযাত্রা, হাজার প্রদীপ প্রজ্বলন, পিঠা উৎসব, ফানুস উড়ানো, পঞ্চশীল গ্রহণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ৫ অক্টোবর রবিবার সন্ধ্যায় ঐতিহ্যবাহী রাজা মাঠে গুরু ভান্তেদের নিয়ে ধর্মদেশনা ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মাধ্যমে উৎসবের উদ্বোধন হবে। সেখানে পার্বত্য উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
এদিকে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বান্দরবান জেলা পুলিশ সুপার মোঃ শহিদুল্লাহ কাওছার। তিনি বলেন, প্রবারনা পূর্ণিমা উৎসবকে ঘিরে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে গোয়েন্দা নজরদারি ও সাদা পোশাকের টিম মোতায়েন থাকবে।
তিনি আরও বলেন, খাগড়াছড়ির সাম্প্রতিক ঘটনায় বান্দরবানে কোনো প্রভাব পড়েনি। এখানে পাহাড়ি-বাঙালি সবাই সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ। বান্দরবানের মানুষ দেশ ও অঞ্চলকে ভালোবাসে, তাই উৎসব নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হবে।